“রাজবাড়ী সরকারি কলেজ” রাজবাড়ী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

১৯৬১ সালের ২৩শে জুন কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ১৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এ কলেজটি। ১৯৮০ সালে এটি সরকারি করা হয়েছিল। বর্তমানে কলেজটির শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। শিক্ষক সংখ্যা ৬৫ জন। ৩টি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক সহ ১৬টি বিষয়ে অনার্স এবং ৬টি বিষয়ে মাস্টার্স খোলা রয়েছে।

কলেজটিতে রয়েছে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি, ৪৮টি কম্পিউটার সমৃদ্ধ ২টি আইটি ল্যাবরেটরি, ১০টি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ। কলেজের ৪ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে একটি পুকুর এবং অন্য পাশে খেলার মাঠ ও নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবাস।

এছাড়া রয়েছে একটি প্রশাসনিক ভবন, দুইটি পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, একটি বিজ্ঞান ভবন, একটি বানিজ্য ভবন, একটি গ্রন্থাগার ও মিলনায়তন ভবন, একটি শিক্ষকদের ডরমিটরি, একটি মসজিদ, একটি শহিদ মিনার, একটি মুক্ত মঞ্চ, তিনটি ছাত্রাবাস ও দুটি টিনের ভবন (পুরাতন ছাত্রসংসদ ভবন, পুরুষ ও মহিলা কমন রুম)। নির্মাণাধীন রয়েছে একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন এবং একটি আধুনিক ক্যন্টিন।

রাজবাড়ী সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট:

তৎকালীন রাজবাড়ী জেলা অবহেলিত অনুন্নত এলাকা বলে চিহ্নিত হলেও শিক্ষার প্রতি মানুষের আকঙক্ষা সকল সময়েই প্রবল ছিল। আর উচ্চ শিক্ষার তীব্র আকাঙক্ষায় তখন এ এলাকার বহু মেধাবী ছাত্র পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, মাগুরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ-সহ দেশের দূর-দুরান্তের কলেজে পড়তে যেত। বিষয়টি এলাকার মানুষের মনে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। এ নিয়ে ভাবতে থাকেন এলাকার অনেক গণ্যমান্য ও বিত্তশালী ব্যক্তি। এ বিষয়ে কাজী হেদায়েত হোসেন, ডা. একেএম আসজাদ, ডা, এসএম ইয়াহিয়া, অমলকৃষ্ণ চক্রবর্তী, বৃন্দাবন দাস, ফজলুল হক মুক্তার, অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম মৃধা, অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল মিয়া, ডা. জলিলুর রহমান, মরগুব আহম্মেদ, ডা. আজাহার উদ্দিন, আঃ হানিফ মোল্লা (গোয়ালন্দ) বিশেষভাবে স্থানীয় পর্যায়ে কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এরমধ্যে রাজবাড়ীতে মহকুমা প্রশাসক নিযুক্ত হয়ে আসেন কাজী আজহার আলী। কাজী আজহার আলী এমন একজন কর্মকর্তা যার ভাবনা যেন মানুষের কল্যাণ আর উন্নয়নকে নিয়ে। কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি বিপুল উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসেন। উল্লেখ্য তখন কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ, সম্পত্তি, ছাত্র থেকে শুরু করে অনুমোদন পাওয়া ছিল এক দুরুহ ব্যাপার। তা সত্ত্বেও কাজী আজহার আলী স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের নিয়ে এগিয়ে আসেন কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে। এ উদ্দেশ্যে কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন কাজী আজহার আলী, সম্পাদক মামুনুর রশিদ (সেকেন্ড অফিসার), যুগ্ম সম্পাদক ডা. একেএম আসজাদ, সদস্য ছিলেন কাজী হেদায়েত হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল মিয়া, অ্যাডভোকেট আবু হেনা, ফজলুল মুক্তার।

কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এলাকার জনগণের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। যে যেভাবে পেরেছেন সে সেভাবেই কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছিলেন।

রাজবাড়ী স্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে ব্যাপ্টিস্ট মিশনের শত বৎসরের ঐতিহ্যবাহী দোতালা বিল্ডিং ৪৭ শতাংশ জমি-সহ ব্যাপ্টিস্ট মিশনের পক্ষে শিমশন চৌধুরী আতাইকোলা, গভর্নিং বোর্ডের পক্ষে রেজিস্ট্রি করে দেন। পরবর্তীতে আশে পাশের অনেক জমি ক্রয় ও দানের মাধ্যম বর্তমান কলেজের জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ একরের উপর। ১৯৬১ সালে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আযম খান। ১৯৬১ সালের ২৩ জুন কলেজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক কাজী আজাহার আলী। প্রথম বৎসরে বর্তমান লাইব্রেরির সামনের চৌ-চালা টিনের ঘরটি ক্লাশ রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বর্তমান অধ্যক্ষের কক্ষ এবং অফিস ভবনটিই অধ্যক্ষের কক্ষ এবং অফিস কক্ষ ছিল।

১৯৬১ সালে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ খোলা হয় এবং ১৯৬২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ক্লাস বিল্ডিং নির্মাণ না হওয়ায় এবং ছাত্র-ছাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৩ সালে বর্তমান জেলা স্কুলে (তখন গোয়লন্দ মডেল হাই স্কুল) ক্লাস নেওয়া হত। কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে বর্তমান সজ্জনকান্দা (কাজী বাড়ির পার্শে)। অধ্যাক্ষের জন্য বাসা হিসেবে প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত হয়। এরমধ্যে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওসমান গণি।

১৯৬২ সালে কলেজের সম্মুখে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন চিত্তরঞ্জন গুহ, নজিবর রহমান, লতিফ বিশ্বাস, আমজাদ হোসেন-সহ রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অনেক ছাত্র-ছাত্রী। উল্লেখ্য উক্ত শহীদ মিনারই অতিতে রাজবাড়ীর কেন্দ্রী শহীদ মিনার। বর্তমানে শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দান রাজবাড়ীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

রাজবাড়ী সরকারি কলেজটি রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যবাহী এবং সর্ববৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানান দিক দিয়ে গৌরবে সমুজ্জল হয়ে আছে জেলার বুকে।